যৌতুক
তখন মাত্র কলেজে ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি। আমার এক ফুফাতো বোনের বিয়ে ঠিক হওয়ায় ওরা আমাদের বাড়ি নেমতন্ন করতে এল।ওর নাম শিমু,ও আমার থেকে প্রায় ২ মাসের ছোটো। আমার সাথেই পড়ে কিন্ত বাকি পড়াশোনা সে নাকি বিয়ের পর করবে।
শিমুকে বললাম তা তোর ওনার প্যাকেজ কত?
ও বললো কি বলছিস? আমার মা আমার দিকে রাগান্বিত দৃষ্টি দিলেন। শিমুর
মা মানে আমার ফুফি বললো যা বলছিস বুঝে গেছি।
ফুফি আমার মা কে বলতে শুরু করলো,
তা পণ নেবে না বলো ভাবী, ছেলে হলো ম্যাজিস্ট্রেট । কি এমন চেয়েছে তাই ৫ লাখ টাকা, আর মাত্র ১০ ভরি গয়না। আমি প্রায় আশ্চর্য হয়ে বললাম সে কি ফুফি এতে তো দশটা মেয়ের বিয়ে হয়ে যাবে গো। আমাকে পাত্তা না দিয়েই ফুফি মাকে বলে গেল, দুটো চার চাকা গাড়ি রয়েছে ছেলেদের, বছরে এক দুবার বিদেশ ভ্রমন করতে যায় ছেলের মা বলছিলো। তারপর আমাদের ৫ ০০জন মতো কনেযাত্রী যাবে, গায়ে হলুদের তত্ত্ব পাঠানো, আবার শাশুড়ি বলেছে হীরের হার সাথে
তার বড় মেয়ে হীরের রিং দিয়ে আশীর্বাদ করবে শিমুকে । তুমি বলো এইটুকু না দিলে ওদেরই বা মান থাকে কি করে লোকের কাছে।আমি মনে মনে বললাম ফুফার মানটা জলে গেল।
ফুফি বলে চলেছে, খুব বড় পরিবার ওদের, বাড়িতে সুন্নতে খৎনা অনুষ্ঠান হয়। ফুফি আমার দিকে তাকিয়ে বললো আর তাছাড়া মেয়েদের কম বয়সে বিয়ে দিয়ে দেওয়াই ভালো ভাবী, কেননা সবাই তখন বলে মেয়ের বয়স হয়েছে। তখন আর মন মত পাওয়া যায় না
ছেলে
যাই হোক
প্রায়
১৬-২১ দিনের মাথায় শিমুর বিয়ের সব আয়োজন শুরু শিমুর বিয়েতে গিয়েছিলাম, খেয়েছিলাম। কি অপূর্ব এই না লাগছিলো শিমুকে সেদিন। কিন্তু ওর বরের সাথে আলাপ করিনি। হাইফাই ম্যাজিস্ট্রেট বর বলে কথা। তাই আর সাহস করে যাই নাই
এর অনেক বছর পর। আমার বিয়ে ঠিক হতে চলেছে।বলে রাখি এখানে পাত্র পাত্রী ভালোবাসা দ্বারা আগে থেকেই যুক্ত আছেন। আমার শ্বশুরবাড়ির লোকজন তো আরো অন্যরকম ভাবে সেরা পণ আদায় করেছিল আমার বাবার থেকে। শ্বশুর, শাশুড়ি আর পাত্র গিয়েছিল পাকা কথা বলতে। আমার শ্বশুর বললেন দেখুন ভাই এইসব খাওয়া দাওয়ার আগে দেনা পাওনাটা সেরেনি তারপর অন্য কথা। আমি প্রচন্ড আশাহত হয়ে কিছু একটা বলতেই যাচ্ছিলাম। কিন্তু দেখলাম মা আমার দিকে এক ঝলসে দেওয়া দৃষ্টি ছুঁড়ে দিয়ে চুপ থাকতে বললো। খুব দমে গেলাম। দেখলাম পাত্র হাসছে,গা জ্বলে উঠলো আরো।
আমার শ্বশুর মশাই আমার বাবার হাত দুটো ধরে বললেন,এই সেরা পণ আপনার মেয়েটাকেই শুধু চাই আমাদের। বিশ্বাস করুন অনেকদিনের শখ ছিল এমন একটা মেয়ের। বাবার চোখ বোধহয় ঝাপসা হয়েছিল কারণ আমি বাবাকে রূমাল দিয়ে চশমা মুছতে দেখেছিলাম।
আমার শাশুড়িমা আমার মায়ের দিকে তাকিয়ে গদগদ হয়ে একগাল হেসে বলেছিল তা আপা এই টুনি টা কি খেতে সবথেকে বেশী ভালোবাসে?
মা বলেছিল গরম ভাত, ডাল আর আলুসেদ্ধ।
আমার দিকে তাকিয়ে শাশুড়িমা বলেছিল আমাকে আপনি আজ্ঞে করবিনা, তুমি বলে বলবি।আর শোন ওই শ্বশুরবাড়ি বাপের বাড়ি এই কথা দুটো বলবি না, শুনতে বড্ড কানে লাগে।এবাড়ি ওবাড়ি বলবি। আমি শুধু মাথা নেড়ে যাচ্ছিলাম।
এমন বোকাসোকা
মেয়ের শুধু মাথা নেড়ে যাওয়া দেখে আমার মা খুবই অবাক হয়েছিল নাকি।পরে সেটা মা আমায় বলেছিল। আর হাসতেছে
তারপর আর কি? হয়ে যায় বিয়ে। আমিও যৌতুক এনেছিলাম, কিছু গল্পের বই,আমার প্রিয়
সেই ল্যাপটপ টা আর আমার সেই পুরোনো স্মৃতির ডায়েরি টা ।এই জিনিস গুলোর
উপর খুব নেশা আমার।
কিন্তু ,না শিমুর মতো বিদেশ বেড়াতে যাওয়া হয় না। আর দামি গাড়িচড়া ও হয় না। আর না হয় হীরের গহনায় ডুবে থাকা
ওই ছোটো খাটো ইচ্ছা পূরণের মধ্যেই তেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়। আর বড় করে বিভিন অনুষ্ঠান ও
হয় না ।এরা তো আর সবচেয়ে বড়লোক পরিবার নয়। ওই দুই ঈদেই ভালো খাওয়া দাওয়া
,কিছু আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া আর একটু ঘুরাঘুরি ,কিছু আনন্দ আর হৈ হুল্লোড় ব্যাস। বড় বড় বাড়ি নেই ,গাড়ি নেই। কিন্তু দুঃখের অসুখ নেই, এটাই যেন প্রকৃত সুখ।
এখানে অনেক টা চাওয়া পাওয়া নেই, শিমুর শশুর বাড়ির মত প্রতি মাসে বিভিন্ন
অনুষ্ঠান আর সেখানে বাবার বাড়ি থেকে আনা অনেক গুলো তত্ত্ব ও নেই ।হরহামেশা অনেক গুলো শশুর শাশুড়ির আবদার ও নেই। এক কোথায় আমার মন মতই সব হয়েছে
তবে ভালোই আছি।সম্পর্ক গুলোতে সুখের স্পর্শ আছে। সম্পর্কে অসুখ এখনও বাসা বানাতে পারেনি।
0 Comments
দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন