ভিন্ন প্রেম - MY LIFE MY STORY
MY LIFE MY STORY https://jfstorys.blogspot.com/2020/10/blog-post_22.html

ভিন্ন প্রেম

 দুটো ভিন্ন রুপ যেমন এক হতে পারে না

   তেমনি দুটো ভিন্ন জিনিস এক পরিমাপ ও করা হয় না

       কিন্তু কয় জনেই বা এগুলো মানে।

তবে এটা ঠিক একজন কে না একজন কে ত্যাগ করতে হয়।হয় ছেলেটি করবে নয়তো মেয়েটি করবে আর নয়তো বা ২ জনই একসাথে করবে

তবে সেটা যাই হোক



.

.

ঠিক তেমনি নানা ত্যাগ তিতিক্ষার মধ্যেই একটা সমপর্ক মজবুত হয়।মজবুত হয় সে বন্ধন,যে বন্ধন হাজার ঝড় উপেক্ষা করে রুপদান পায়।

   নাম পায় একটা নির্দিষ্ট। অধিকার পায় চিরতরের

.

.

আমি নিলুফা,ছোট থেকেই হাসি তামাশায় থাকতাম,থাকতাম নিজের মত

   আমাকে দেখলে কেউ বলবেই না যে আমিও একদিন কোনো প্রান্তে সবাইকে কিছু পরীক্ষায় দাঁড় করাবো

কে জানে,হয়তো সময়ের মোড় ঘুরপাক খেলে সবারি কম বেশি মত পরিবর্তন পায়।

.

.

আমি চট্টগ্রাম এর পটিয়ার মধ্যেই থাকি ছোট্ট একটা গ্রামে

 সেই কুসুমপুরা তে

  যেখান থেকেই বড় হই সবার সাথে একসাথে 

    পরিবারের একমাত্র মেয়ে ছিলাম আমি।

কখন যে আমার ছোট বেলা টা কেটে যায় বুঝতেই পারিনি।

.

.

যখন আমি দশম শ্রেণী তে উঠি তখন বিদ্যালয়ে যাওয়ার সময় প্রায় একটা ছেলে কে দেখতাম

    দেখতে দেখতে কেটে যায় ৪ মাস

হঠাৎ একদিন ছেলেটা আমার সামনেই চলে আসলো

তার নাকি আমাকে ভালো লাগলো

আমার সাথে সে থাকতে চায়

.

.

-আমি তো আপনার নাম এই জানিনা, কে আপনি?

-আমি নিরব,তুমি?

-নিলুফা

-সুন্দর তো।আমার সাথে মিলে গেছে অনেক টা।

-তো?

-তো কি?আমার কথায় রাজি আছো তুমি?

-ভেবে দেখতে হবে

-কয়দিন? 

-জানিনা,

-আচ্ছা, সময় লাগলে লাগুক।তাও হ্যাঁ বলিও

-দেখা যাক কি হয়

-হুম।ঠিক আছে

-আচ্ছা, পথ ছাড়ুন।বাসায় যাবো।

-আচ্ছা যাও,ভালো থেকো।

-আপনিও

.

.

নাম টাই তো শুধু জানলাম, আর তো কিছু জানা হলো না,রাজি হবো কি

      নাকি না করে দিবো।বুঝতে পারতেছি না।

ভাবতে ভাবতেই একটা দিন কেটে গেলো

মাঝখানে একটা শুক্রবার ও পড়ে গেলো।

আচ্ছা সে আমার সমপর্কে কতটুকু জানে

.

.

আমিও তো তেমন কিছু জানিনা

সমস্যা নাই।কাল দেখা হলে জিঙ্গাসা করা যাবে।

আমার সমপর্কে কতটুকু জানে তাও জেনে নিবো।

পরে না হয় আমার মত জানাবো তাকে

.

.

এদিকে নিরব ও ভাবতে লাগলো নিলুফা কি হ্যাঁ বলবে

 নাকি না বলবে।

     আমার সাথে কি আর দেখা হবে।নাকি আর কথাই বলবে না।বুঝতে পারতেছি না।আর মাত্র একটা রাত পার হওয়ার অপেক্ষা। কাল নিশ্চই সে বিদ্যালয়ে আসবে

আর তো কিছু সময়।

.

.পরদিন সকাল বেলায় ঠিক ৯ টার সময় নিরব দাড়িঁয়ে আছে নিলুফার বিদ্যালয়ের সামনে

     যখনি নিলুফা কে আসতে দেখলো তখনি সামনে এগিয়ে গেলো।

.

-কেমন আছো?

-হ্যাঁ,ভালো,আপনি।

-হ্যাঁ,ভালো,তো কিছু কি ভাবলা?

-বলতে পারছিনা।আচ্ছা আপনি কোথায় থাকেন সেটাই তো জানা হলো না।

-জানবা কিভাবে,জিঙ্গাসা না করলে।

-কেন,না জিঙ্গাসা করলে কি নিজ থেকে বলা যায় না।

-হুম যায় তো।

-তো এত কথা না বলে বলেই ফেলুন।

-আমি আলমদার থাকি

-আলমদার!

-হুম,কেন কি হয়েছে?

-নাহ্, 

.

.

শুনেই নিলুফা চুপ হয়ে গেলো। ভাবতে লাগল কি একটা

-কি হলো।চুপ কেন

- কিছুনা,আচ্ছা তুমি কি?

-ওয়াহবিয়া।

-ওয়াহবিয়া!

-হুম,কেন কি হয়েছে?

-কিন্তু আমরা তো সুন্নি।

-তাতে কি মানুষ তো নাকি।

-এটা হয় না।

-কেন হয় না,ভালোবাসায় কোনো কিছুর তপাৎ খুঁজে না। খুঁজে মন বুঝার মত কেউ।

-বুঝলাম।

-এখন কি রাজি আছো।নিলুফা না বলো না প্লিজ। আমি কি তুমি কি সেটা বড় না।ভালোবাসি তো।এর চেয়ে আর কি হতে পারে।

.

.

-যদি আমার পরিবার না মানে।তার উপরে তুমি........

-না মানলে না মানবে।তখন সেটা নিয়ে ভাবা যাবে।

-আচ্ছা ঠিক আছে,আমার দেরী হয়ে যাচ্ছে।

-যাওয়ার আগে হ্যাঁ বলে যাও।তাহলেই যেতে দিবো।

-আচ্ছা, হ্যাঁ

-সত্যি!

-হুম।এখন আসি।

-ঠিক আছে যাও।

.

.

এভাবেই রীতিমত তাদের কথা হয় দেখা হয়।

আর দেখতে দেখতে কেটে যায় ২ বছর।নিলুফার বাসায় বিয়ের কথা নিয়ে আলাপ হচ্ছে জেনেই নিলুফা তা নিরব কে জানায়।

-কি করবো বল এখন।

-আমাদের কথা বলে দাও।

-মা, বাবা রাজি হবে না,ভাইয়ারা তো হবেই না।আমাকে মেরে ফেলবে তাও হবেনা।

-কেন হবেনা।বলে দেখ হয় কিনা।

-জানিতো হবেনা।কারণ ওয়াহবিয়ার সাথে সুন্নি কখনো মিলে না।এটা সবসময় আমার ভাইয়ারা বলে থাকে।

    প্রায়ই এটা নিয়ে কথা হয়।

-আগে তো বলবা,তারপর দেখা যাবে।না হলে পালিয়ে যাবো।

-আচ্ছা, ঠিক আছে।

.

.

নিলুফা যখনি তার সমপর্কের কথা জানালো তখন থেকেই যেন একটা ঝড় যাচ্ছে।

  একজন ওয়াহবিয়া কে কি করে ভালোবাসতে পারে।যারা নবি রাসূল কে তেমন মানে না।বিভিন্ন আচার, নিয়ম কানুন মানে না।যাদের সাথে অনেক পার্থক্য।

.

.

এসব শুনেও নিলুফা পিছুটান হয় নি।নিরব তার পরিবার কে নিলুফার কথা জানিয়েছে।

  তাদের ও একই মতামত।পরিশেষে কাউকে না জানিয়ে পালিয়ে যায় তারা

.

.

পাশেই একটা এলাকায় বিয়ে করে উঠে যায় তারা।নিজেদের মত করে থাকতে শুরু করে।পরিবারের কারো সাথেই নিলুফার যোগাযোগ নেই।

    নিরব প্রায়ই তার মা বাবার সাথে কথা বলে।এরই মাঝে তার মা বাবা মেনে নেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করে

.

.

কিন্তু নিলুফার পরিবার থেকে কেউ কখনো খোঁজ ও নেয় নি

এটা নিয়ে তার প্রায়ই মন খারাপ হতো

.

.

এটা নিরব দেখতো এবং তাকে বুঝাতো একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে।

.

.

কিছুদিন পর নিরবের মা বাবা তাদের বাসায় চলে আসলো। নিরব কে দেখেই হাউমাউ করে কান্না জুড়ে দিল।নিরব ও।এরপরই সবাই খাওয়া দাওয়া করলো এবং নিরব কে বলল তারা যেন তৈরী থাকে।কালই তাদের বাড়ি নিয়ে যাওয়া হবে।

.

.

নিলুফার সাথে ও তাদের আালাপ হয়ে গেল।মুহুর্তেই যেন খুশির বন্যা নেমে এলো।

.

নিরব বাসা ভাড়া দিয়ে তাদের চলে যাওয়ার খবর টা জানিয়ে দিলো। পরদিন এই তারা বাসায় ফিরে গেলো।

এভাবেই কেটে যায় ১ বছর.......

.

.

 এদিকে নিলুফা কে দেখতে না পেয়ে নিলুফার মা প্রায়ই অসুস্থ থাকতো।তাই তাকে সুস্হ করার জন্য নিলুফার ভাইয়েরা সিদ্ধান্ত নিলো নিলুফা আর নিরবের সমপর্ক টা মেনে নিবে।

তবে যে যার অনুসারী সে তা এই পালন করবে।

এই সিদ্ধান্তেই তারা স্থির হল।

.

.

ইতিমধ্যে খবর টা নিলুফার শশুর বাড়ি পৌছে যায়।আর এতে সে খুশি হয়ে কান্না করে দেয় আর ভাবতে থাকে তার পরিবারের সবার কথা।ছোটদের সাথে খুনসুটির কথা।

অপেক্ষায় থাকে তার ভাইদের আসার জন্য। নিরবের পরিবার ও বিষয় টা জানতে পেরে খুশি হয়।কারণ নিলুফা খুব তাড়াতাড়ি এই তাদের মন জয় করে পেলে।

.

.

ঠিক ১ সপ্তাহ পরেই নিলুফার ভাইয়েরা তাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য গাড়ি নিয়ে আসে।নিলুফা তাদের আসা মাত্রই সমাদর করার জন্য লেগে পড়ে।এর কিছুক্ষণ পরেই সে তৈরী হয়ে নিরব কে নিয়ে চলতে লাগলো তার সেই ঠিকানায়। 

.

.

আসা মাত্রই মা মেয়ের মিলন দেখে সবাই খুশি।সব কিছু যেন ঠিক ঠাক।কিছুই হয়নি।মনে হয় একটা স্বপ্ন। তাদের দুই পরিবার এই মেনে নিল তাদের

সংগ্রাম টা একটু কষ্টকর ছিল কিন্তু দুইজনের ভালোবাসা আর বিশ্বাসের জোরেই তারা তাদের হারিয়ে ফেলা দিন,মানুষ সবাইকে ফিরে পেল।

.

.

দুঃখের আধাঁর ঘনিয়ে সুখের ছাউনি দেখা দিল।

সব কিছু আপন গতিতেই চলতে লাগল

২ টি সন্তানের জননী হলো নিলুফা।দুইজন এই বড় হলো। ছেলেটি একাদশ শ্রেণিতে আর মেয়েটি নবম।

.

.

কিন্তু সুখ বেশি দিন আর সইলো না

একটি গাড়ি এক্সিডেন্টেই নিরবের মৃত্যু হলো।

কোনো মতে তাদের দিন কাটতো

নিরব মারা যাওয়ার পর নিলুফার জন্য ঐ বাড়ি টা যেন কেমন হয়ে গেল।একটা শেষ হতে না হতেই আরেকটা কিন্তু তারপর ও নিলুফা ভেঙ্গে পড়েনি।

তার মা মারা যাওয়ার আগে তাকে কিছু সম্পত্তি দিয়ে গেল।তা বিক্রি করেই সে ছোট একটি ঘর তৈরি করে সন্তানদের নিয়ে থাকার জন্য।

.

.

সব ঠিকঠাক।কিছু দিন পর এই নতুন বাড়িতে যাবে।অনেক চাপ গেলো তার উপর

.

এই ঘোর কাটতে না কাটতেই নিলুফা অসুস্থ হয়ে পড়ে।কারণ সে রক্ত শূন্যতায় ভোগে তার পাশাপাশি পিত্তে পাথরের।কয়েক দিনেই সে অনেক টা রোগাটে হয়ে যায়।এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতাল।

এরই মাঝে একটা অপারেশন হয়ে যায়।তার সবাই আসা যাওয়ার উপর আছে।কিন্তু তার শরীরের কোন উন্নতি দেখা দিচ্ছে না

তার মেয়েটাও ভেঙ্গে পড়ে গেছে।

.

.

এতটুকু একটি মেয়ে।তার উপরে মায়ের এই অবস্থা। দুই ভাই বোনের চোখের পাতা এক করেনা মায়ের জন্য। কখন জানি মা ডাক দেয় এই ভেবে

নাওয়া খাওয়া সব ভুলে গিয়েছে দুই জনেই।

এভাবেই প্রায় ছয় মাস কেটে যায় নিলুফার হাসপাতালে

কিছু দিন পরে ডাক্তার তাকে অপারেশন করার অনুমতি দেয় ঠিকই কিন্তু নিলুফার অবস্থা এতটাই খারাপ অপারেশন করতে পারবে কিনা এই ভেবেই ডাক্তার তাকে আরো দুই দিন অপেক্ষায় রাখল।

.

.

এরই মাঝে সব ঠিক ঠাক হলো।ডাক্তার ও মন স্থির করলো তাকে অপারেশন করাবে।সব ঔষুধ কিনে আনা হলো।সকাল সাতটায় নিলুফার অপারেশন।

কিন্তু কে জানতো সকালবেলার পাখি ডাক দিয়ে ঘুম ভাঙ্গার আগেই রাতের জোনাকি পোকার মিটমিট আলোর মত নিলুফার জীবনের আলো নিভে যাবে।

হারিয়ে যাবে ক্ষনিকে যেমন করে রাতের চাঁদ তার অস্থিত্ব হারায়।

.

.

অন্তিম.....





অন্যদের সাথে শেয়ার করুন

0 Comments

দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন ??

ক্যাটাগরি