ছোট্ট কুঠিরের প্রেম
সবুজ
ঘেরা গ্রাম বাংলা কে না পছন্দ
করে। সবাই চায় সবুজের
বুক হারিয়ে যেতে যেথায় কোনো
ব্যাথা বেদনা নেই। চারদিকে নানান
রকমের ঘর,নানান রকমের
গাছপালা,যা গ্রাম বাংলার
সৌন্দর্য কে আরো বেশি
ফুটিয়ে তুলে। এরই মাঝে একটি
গ্রাম শীতল দিঘির গ্রাম।যার
পাশ দিয়ে বয়ে গেছে
নদী।বর্ষায় অথৌই পানি।গ্রীষ্মের নানান
ধরনের ফল,যা প্রকৃতির
আমেজ অনেকটা বাড়িয়ে তোলে। এখানেই থাকে আন্জু,যদিও
নাম তার আন্জুমান সবাই
তাকে আন্জু বলেই ডাকে।নামে বেশ
মায়াবী যেমন তেমনি তার
মন,রঙের দিক দিয়ে
শ্যাম বর্ণের। নানার বাড়িতেই তার বড় হওয়া।এক
ভাইয়ের পর সেই একমাত্র
মেয়ে মায়ের,সবার খুব আদরের।
বাবা তার মা কে
ছেড়ে চলে যায় ছোট
একটি ঝগড়া করে,এর
পর থেকেই নানার বাড়িতেই থাকছেন তারা।ছোট থেকেই সবার আদর পেয়ে
বড় হতে লাগলো। পাশের
বাড়ির এক মহিলা কে
তার মা বোন ডাকে
যার ফলে আন্জু তার
ঐ খালা টার কাছে
অনেক সময় থাকে।সেখানে তার
সমবয়সী অনেকেই আছে যার জন্য
সে সেখানে ছুটে যায় বার
বার।
.
.
তার
খালার ও দুই মেয়ে
এক ছেলে রয়েছে, এদের
সাথেই আন্জু তার সময় কাটায়।
ছেলে
টার নাম ফরহাদ, সবাই
তাকে পলাশ ডাকে।খেলার ছলে
দুষ্টমি করতে করতে বন্ধুত্ব
হয় তাদের। এভাবেই কেটে যায় আরো
একটি বছর। বয়স যখন
সাত।দুইজন কেই এক সাথে
এক স্কুলে ভর্তি করানো হয়।এখান থেকেই পলাশ আন্জুর বন্ধুত্ব
টা আরো নিবিড় হয়।
কয়েক মাস যাওয়ার পর
মায়ের অসুস্থতার জন্য আন্জু কে
বাড়ি চলে যেতে হয়।নতুন
স্কুল নতুন নতুন বন্ধু
সবার সাথেই মিশে যায় আন্জু।
যেন সবাই তার কত
চেনা।পলাশ আন্জু একে অপরের বাড়ি
আসা যাওয়া করতে করতে দুইজনের
সাথে বেশ ভাব হয়,একে অপরে তাদের
মায়ের হাতের রান্না নিয়ে আসে দুইজনে
এক সাথে বসে খায়।তাদের
এমন ভাব দেখে যার
জন্য আন্জুর মায়ের থেকে অনুমতি নিয়ে
পলাশের আম্মু দুইজন কে সাত বছর
এর সময় ছোট করে
বিয়ে দেয়।যার কোন ছিল না
উকিল,না ছিল কোন
আয়োজন।ছিল দুই পরিবারের লোকজন
আর সাথে তাদের অফুরন্ত
ভালোবাসা। ছোট বেলার বিয়ে
তারা কিছুই বুঝে না,জানে
শুধু তারা দুই জন
বন্ধু। দুই পরিবারের লোকজন
বলেছে যখন তাদের বয়স
হবে আঠারো তখনি তাদের ধুমধামে
বিয়ে দাওয়া হবে।
.
.
সময়
কি কখনো স্থগিত থাকে?
সে তো চলতে থাকে
আপন গতিতে ঠিক যেন ঝর্ণার
মত আপন মনে।এভাবেই দেখতে
দেখতে পেরিয়ে গেলো ছয় বছর।
আন্জু ৫ম পাশ করেই
ষষ্ঠে ভর্তি হলো।এরই মাঝে পলাশের বাবা
অসুস্থ হয়ে যাওয়াতে তাকে
পাড়ি দিতে হয় প্রবাস
জীবনে। তার আগেই তারা
বুঝতে পারে দুই জন
দুই জনকে পছন্দ করে।
যেহেতু তাদের পরিবার ও রাজি,তাই
দুই জনেই স্বপ্ন দেখে
ছোট্ট কুঠির বানাবে, যেখানে তারা হেসেখেলেই দিন
পার করবে,পাড়ি জমাবে
ভালোবাসার।দুই জন দুই জনকে
কথা দিয়েছে
যখনি আমাদের বয়স
হবে আঠারো
তখনি আমরা সম্পুর্ন
করবো আমাদের সেই ছোট্ট কুঠির
ও
দিন
এলো চলে যাওয়ার,যাওয়ার
আগে ফ্রেমে বাঁধাই করা একটি ছবি
পলাশ আন্জু কে দিল।আর একটি
নিজে নিল সাথে।সবাই রয়েছে,
সাথে আন্জু ও, চোখে পানি
টলমল কিন্তু কান্নার উপায় নেই। পলাশ
কে যেতে হবে তাই
সবার সাথে দেখা করেই
বেরিয়ে গেলো।
.
দুই বছর কেটে গেলো আন্জু ও অনেক টা বড় হলো।কিন্তু কখনো তার এই দুই বছরে পলাশের সাথে কথা হলো না। আন্জু প্রায়ই পলাশদের বাড়িতে যায় কিন্তু সে কথা বলে না।পলাশের আম্মু কথা বলার সময় সে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখে, কত মায়াবী হয়ে গেলো পলাশ। ঠিক যেন অন্য রকম।বিকেল বেলায় আসে সন্ধ্যার আগেই চলে যায়।হঠাৎ একদিন মাঝ রাতে আন্জু খুব অসুস্থ হয়ে গেলো।দ্রুত তাকে হসপিটাল ভর্তি করানো হলো।এর মধ্যেই সে অজ্ঞান হয়ে গেলো।ডাক্তার বিভিন্ন ইনজেকশন দিয়ে, স্যালাইন দিয়ে তার জ্ঞান ফিরালো।এভাবে এক সপ্তাহ থাকতে হয় তাকে হসপিটাল। এরই মধ্যে ডাক্তার জানালো যে তার ব্রেনে সমস্যা আছে এবং সেই সাথে তার পেটে খাদ্য নালীতে সমস্যা রয়েছে কিছু।এগুলো শুনেই তার মা কান্না জুড়ে দেয়। স্বামী চলে যাওয়ার পর দুই সন্তান কে বুকে নিয়ে বেঁচে আছেন তিনি। এখন মেয়ের কিছু হয়ে গেলে তিনি থাকবেন কি নিয়ে।ডাক্তার চিকিৎসা করে আন্জু কে অনেকটা সুস্থ করে তুললো।আর জানালো তাকে যেন সবসময় হাসি খুশিতে রাখা হয়।হসপিটাল থেকে তাকে বাড়ি নিয়ে আনা হলো।এভাবেই দিন গুলো অতিবাহিত হতে থাকে।আন্জু প্রায়ই অসুস্থ হওয়ার কারণে এক বছর স্কুল যাওয়া বন্ধ ছিল তার।
.
.
বয়স আঠারো, আন্জু এখন নবম শ্রেণিতে পড়ে। আজকে সে অনেক আগেই স্কুলে চলে এসেছে। আসার সময় প্রতিদিন কিছু না কিছু আনতো আর সবাইকে এক সাথে নিয়ে খেতো।একা কখনো কিছুই খেত না।এমনকি বান্ধুবিদের জন্মদিনে নানান কিছু কিনে আনতো সে।ঠিক আজকে ও এনেছে শুধু এক রকমের না পাঁচ রকমের পিঠা।এনেই সবাইকে দিতে লাগলো।শুধুমাত্র একজন বান্ধবী তার আর পলাশের বিষয়টি জানতো।তাকে বললো আজকে পলাশ আসবে।সবাই আজকে বাড়িতে অনেক আনন্দ করতেছে।হয়তো খুব তাড়াতাড়ি তাদের বিয়ের কথা ও পাকা হবে। আজকে সব ক্লাস করবে না। যেমন কথা ঠিক তেমন কাজ।লেসার পেতে না পেতে চলে আসলো বাড়ি। বাড়ি থেকে যাওয়ার সময় পরিবেশ দেখলো এক রকম এখন হয়ে গেলো অন্য রকম। সবাই কেমন জানি হাহাকার করতেছে।খবর এলো নাকি ঢাকা থেকে আসার পথেই কুমিল্লায় ট্রাকের সাথে সংঘর্ষ লেগে ট্রাকচালক এবং পলাশ সহ আরো তিনজন নিহত হয়েছে। কথাটি যখনি আন্জুর কানে এসে বিঁধল ঠিক তখনি যেন তার পায়ের তলার মাটি সরে যায়। পুরো আকাশ টাই যেন ভেঙ্গে পড়ে। একটু আগেও যে অনেকটা হাসি খুশিতে ছিল,এক অঢেল ভরসা নিয়ে আসলো তা নিমিষেই কোথায় যেন হারিয়ে গেলো। এ বুঝি সব শেষ হয়ে গেলো। ছোট্ট কুঠির এর প্রেম টাই হলো শুধু কুঠির টাই আর বানানো হলো না। হলোনা প্রতি দিন এক এক করে গুনতে থাকা সময় পেরিয়ে কুঠিরের মানুষ গুলোর দেখা।
এ যেন সব হয়েও হলোনা।দিন যায়,বছর যায়,মাস যায়, আন্জু এখনো পথ চেয়ে রয় যদি আবার ফিরে আসে সেই পলাশ সাথে তার না গড়া স্বপ্ন গুলো।
0 Comments
দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন