ভালোবাসার অপেক্ষা
- কাকি কেমন আছেন?
- এই তো ভালো তুই কেমন আছিস।
- ভালোই। তা কাকা কোথায়?
- আছে, বাহিরে।তুই তো দেখি এখন আর আগের মত আসিছ না।কেন কিছু হয়েছে?
- না, কাকি।এমনেই আসতাম না।তবে এখন থেকে সব সময় আসবো।
- কেন?
- আপনার ঘরের জামাই হবো যে তাই।
- আমার ঘরের জামাই কেমনে হবি তুই? কি বলিস।
- হুম।আপনার ঘরের এই তো। কেন আপনার মেয়ে তানু আছে না।ওরে বিয়ে করবো।
- মানে? তুই কি আসলে ঠিক আছিস?
তানু কে কিভাবে বিয়ে করবি তুই?
- কেন করতে পারিনা?
- একটা ৫ বছরের মেয়েকে তুই ২০ বছরের ছেলে বিয়ে করবি।আরেহ্ তুই মজা করিস না।
- তো কি হয়েছে ৫ বছর। আমি তো ওরে এখন বিয়ে করতেছি না।আমি ও প্রাপ্ত বয়স হওয়ার জন্য অপেক্ষা করবো। যখন বিয়ের জন্য প্রস্তুত হবে তখনি করবো। আপনাকে এই বলে রাখলাম।
- এই যা তো তুই।তোর আজকে মাথা ঠিক নেই বুঝা যাচ্ছে।বাজে বকিস না।কাজে যা।
- ঠিক আছে।বিশ্বাস হচ্ছে না তো? দেখবেন সময় হলে।এখন গেলাম।
.
.
- আমার তানু কই।ঘুমাইয়া পড়ছে?
- হুম।ঘুমিয়ে পড়ছে।আজকে অনেকদিন পর তামিম আসছে। কি সব বলতেছে।মনে হয় মজা করছে,আমার সাথে। ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম না।
- কেন? কি বললো, তামিম?
- বললো সে নাকি তানু কে বিয়ে করবে।এই সেই।
- হাহাহা
- তুমি হাসছো?
- তো নয়তো কি করবো। তুমি এটা বুঝলে না।সে তো মজা করছে তুমি রাগ কর কিনা তাই
- নাহ্। এটা একদম না।মজা হলে আমি বুঝতাম।
- আচ্ছা।বাদ দাও।আমাকে এখন খেতে দাও।
- আচ্ছা।
.......…
তানুর বয়স যখন আট
- কিরে তানু স্কুলে যাস নাই?
- না ভাইয়া।যাই নাই আজকে।
- কেন যাস নাই?
- আম্মু নানার বাসায় যাবে তাই।
- অহ্ আমার নানা শশুরের বাসায়?
- কি বলেন ভাইয়া,বুঝি নাই
- ও তুই বুঝবিনা।কাকি কই?
- আম্মু ঘরে।
- শাশুড়ী আম্মা কেমন আছেন?
- তুই আবার শুরু করছিস?
- কি শুরু করলাম? ভবিষ্যতে ডাকতে হবে। তাই এখন থেকেই শুরু করলাম।পরে ডাকতে কষ্ট হবে না তাই।
- তোর সাথে আমি আর পারবো না।তানু ছোট মানুষ। ওর সামনে এগুলো বলিস না।
- ধুর, কিছু হবেনা।ওর ও তো জানা প্রয়োজন আমি যে তার ভবিষ্যৎ ইমইমইম।
- চুপ করবি তুই? নাকি।
-আচ্ছা,হলাম চুপ।তা বেড়াতে যাবেন কখন?
- হুম,বিকেলে।
-ওহ্
...............
এভাবেই দুষ্টুমি আর খুনসুটি তে দিন গুলো অতিবাহিত হতে থাকে।
তানুর বয়স যখন ষোলো
-কিরে তামিম আর কত দিন আমাকে এভাবে কষ্ট করতে হবে।বাড়িতে কি বউ আসবে না? মরার আগে কি একবার দেখেও যেতে পারবো না।
- কি করবো বল মা।অপেক্ষা তো করতেই হবে।
- কিসের অপেক্ষা। কি বলিস তুই
- কি আবার,তানুকে বিয়ে করার।
- কি বলিস তুই এগুলো। এতদিন এগুলো নিয়ে কিছু বলি নি।এখন তো দেখছি বলতেই হবে।
- কি বলবা।কিছু না বলে তানুর মা বাবার কাছে প্রস্তাব দাও।
- তোর মনে হয় তোর কাছে তারা মেয়ে বিয়ে দিবে।যেখানে তোর বয়স ৩১ তো মেয়েটা মনে হয় চৌদ্দো কি পনেরো।
- এখানে ও ভুল বললে মা।ওর বয়স কাল এই ষোলো হলো।
- তুই এটা ও জানিস?
- হুম,জানি তো সেই কবে থেকে দিন গুনে আসতেছি।অপেক্ষা করে আছি।
- না।আর চুপ করে থাকবো না আমি।এইবার এর বিহিত করতেই হবে। যখনি তোকে বিয়ের কথা বলি তখনই তুই এই কথা গুলো বলিস।
- হুম।তো করো।বিয়ে করলে তানুকেই করবো। নয়তো তোমার ছেলে বিয়েই করবে না।
- এগুলো কেমন কথা তোর।আজ তোর আব্বু কে বলবো আমি।
- হুম, বলো।এতে আমারই ভালো।
.
.
.
- তোমাকে কিছু বলার আছে
- হুম, বলো।
- তোমার ছেলে এতদিন বলতো তানুকে বিয়ে করবে, বিয়ে করবে। যা আমরা সবাই মজার ছলে নিয়েছি।কিন্তু আজ সে বলেই দিল তাকে ছাড়া আর কাউকে সে বিয়ে করবে না।
- এতো মহাবিপদ।আমার চাচাতো ভাইয়ের একটা মাত্র মেয়ে।তাও এতো সুন্দর। চেহারা তার এতো মায়াবী। যাকে দেখলে মন ঝুরিয়ে যায়।এই মেয়েকে কি ভাই আমার ছেলের কাছে দিবে।
- এগুলো তো আমিও ভাবতেছি।সেই সকাল থেকে। সে ওরে ছাড়া আর কাউকে বিয়েই করবে না। বলে দিল।
- আচ্ছা,
ওর মাথায় তানুর এই ভুত দিলো কে।মেয়েটার ছোট থেকেই সে এই পাগলামি করে আসতেছে।
- জানিনা গো।আমি কিছুই জানিনা। তুমি কিছু একটা করো।
- আচ্ছা,দেখি কি করা যায়।
.
.
- কিরে তাইন্না।খবর কি তোর?
- তামিম ভাইয়া আপনি আমাকে তাইন্না কেন বলতেছেন?আমার নাম কি তাইন্না?
- ওমা,আমার টুনি দেখি রাগ ও করে।এটা তো আমার ভালোবাসা।তোর প্রতি।
- কি রকম ভালোবাসা এটা আবার?
- তোকে আমার ঘরের বউ করার ভালোবাসা।তাও আজ থেকে অনেক আগেই এই ভালোবাসা জন্ম নিয়েছে শুধু তোর জন্য।
- বুঝলাম,ভাইয়া আপনার না মাথায় সমস্যা আছে। ডাক্তার দেখান যত দ্রুত সম্ভব।কি সব বলতেছেন।আমার মনে হয় আপনি সেন্সেই নেই।
- তুমি বুঝলা না পাগলি আমার ভালোবাসা।বুঝবা,বুঝবা।
- যান তো এখান থেকে এখন।আমি আপনার সাথে আর কথাই বলবো না।
- রাগ করিস না টুনি আমার।এটাই সত্যি।
- ব্লা ব্লা।এখনো যান নাই।পাগল।
- এই পাগল এই একদিন তোর পাগল হবো।দেখিস আমার পাগলি।আজ আসি রে।
.
.
আজকের দিন টি সবচেয়ে বেশি আনন্দের। কেননা আজকের এই দিনে তানু পৃথীবির আলো দেখে।
সেই ছোট্ট তানু আজ ১৬ তে পা দিলো।সব বেশ ঝাকঝমক করে সাজানো হলো। কেননা একমাত্র মেয়ে মায়ের। ৩ ছেলের এক বোন বড়ই আদরের।
সন্ধ্যায় কেক কাটা হবে তার।
...........
- শুনো,যেহেতু তামিম কে ফিরানো যাচ্ছে না।আজ তুমি ওই বাড়িতে গেলে তোমার ভাইকে বলিও কথা টা।আমার কাছেও তানু কে বেশ ভালোই লাগে। এত সুন্দরী মেয়ে।আমার ঘরের মেয়ে করেই রাখবো তাকে।তুমি গোপনে বলিও।দেখো সে কি বলে।
- আচ্ছা, ঠিক আছে।আমি বলবো। কিন্তু সে রাজি হবে তো?তার উপর আজকে মেয়ের জন্মদিন। আজকে বলা উচিত হবে?
- বলে দেখোই না।
- ঠিক আছে।
.
.
- এই নে।তোর জন্মদিনের উপহার।
- ধন্যবাদ, তামু ভাই
- প্রতিশোধ নিচ্ছিস?
- নাহ, ভাই।আমি কি প্রতিশোধ নিতে পারি?
- আহা,কলিজায় লাগে।
- যান, খেয়ে বাসায় গিয়া ঘুমান তো।
- এই তানু,খেতে আয়।
- জ্বী, আম্মু, আসি
.
.
- রহিম তোকে একটা কথা বলতাম
- হ্যাঁ, ভাইয়া বলেন না কি কথা।
- দেখ কিভাবে বলবো আমি ঠিক বুঝতে পারছি না।আবার নিজেকে অনেক ছোট ও লাগতেছে।
- আরেহ্, এত ভয় পাইয়েন না তো, বলেই দেখুন।এখানে আমি আর আপনি।আর কেউ তো নেই।
- হুম,তা ঠিক।যাইহোক, তুই তো শুনলি জানিস ও তামিম কে।তার পাগলামি ও শুনতেছস।এখন আমার একটা আবদার আছে তোর কাছে।
- হুম,ভাইয়া বলেন না।কি আবদার।
- আমি তোর তানু কে আমাদের ঘরের মেয়ে করে নিতে চাই।যদি তোরা রাজি থাকিস তবেই।
- ভাইয়া আমি কি বলবো। একে তো আপনি কখনো আমার কাছে এভাবে কখনো কিছু চান নি।আমার বড় ভাই আপনি।আচ্ছা, আমি তানুর আম্মুর সাথে কথা বলি।
- ঠিক আছে।বলে আমাকে জানাইস,তোর ভাবি চিন্তায় আছে আবার।
- আচ্ছা, ঠিক আছে।
.
.
- সবার খাওয়া কি শেষ?
- হ্যাঁ,শেষ।
- তানু ঘুমাইছে?
- মনে হয় না।এতক্ষণ তো এখানে ছিল।
- আচ্ছা, তোমার সাথে আমার কথা আছে।
- হ্যাঁ, বল।
- আজকে আফজাল ভাই খাওয়া শেষে বাড়ি যাবে,এই মুহুর্তে আমাকে ডেকে নিয়ে কিছু কথা বললো। আমার ভাই প্রথম আমার কাছে এমন ছোট হলো, তাও নিজের ছেলের জন্য। আর কখনো ভাইকে দেখিনি এমন হতে।আমার বিষয় টা খুব খারাপ লাগছে।
- কেন কি হয়েছে।খুলে বল।
- আমার ভাই চাচ্ছে,তানুকে তাদের ঘরের বউ করে নিতে।
- কিহ্, কি বল তুমি এটা।আমাদের একটি মাত্র মেয়ে।
সব কিছু দেখে শুনে ভালো জায়গায় বিয়ে দিব।
- হ্যাঁ, এটাই বললেন তিনি। মনে হয় তামিম ঘরে এসব নিয়ে ঝামেলা করতেছে।নতুবা তিনি আসতেন না আমার কাছে এই প্রস্তাব নিয়ে।
- আমি জানিনা।কিছু।
- তুমি তো না শুনেই জানিনা বলতেছো। এখন কি করা যায় সেটা বল।
- আমি কি বলবো। এটা হয় নাকি।সুন্দর আছে নাকি এমন।
- কেন হয় না।তামিম কি খারাপ ছেলে নাকি।আর আমার ভাইদের কি কিছু অভাব আছে নাকি।সেই ছোট থেকেই তো তামিম কে দেখতেছো, কিছু খারাপ দেখলে তার?
- তো, মনে হচ্ছে, তুমি রাজি তোমার ভাইয়ের প্রস্তাবে।
- হুম,রাজি তো।আমার মেয়েটা আমাদের কাছাকাছি থাকবে। যখন তখন আসতে পারবে।সামনেই দেখবো তাকে।খারাপ কি? বল।
- ওহ, আচ্ছা। তো তোমার মেয়ে তুমি যা ভালো মনে করো, তাই কর।
- আমার মেয়ে, তোমার মেয়ে না?
- হ্যাঁ, আমার ও মেয়ে।
- তো, তাহলে?
শুনো, আমরা পারি অন্য জায়গায় তানু কে বিয়ে দিতে।কিন্তু সেখানে তো সে সুখী নাও হতে পারে তাই না।আমার বড় ভাই আমার কাছে আবদার করলো। সেটা তো আমি ফেলতে পারি না। তাই না।
- হুম, তা তুমি ঠিক বলছো। ঠিক আছে তানুর ও তো মতের একটা ব্যাপার আছে তাই না।আমরা বললে তো আর হবে না।
- তুমি তানু কে সময় করে বলিও আর সে কি বলে শুনো।
- আচ্ছা, ঠিক আছে।
.
.
- কি বলেছো, রহিম কে?
- হ্যাঁ, বলেছি।
- কি বললো
সে?
- বললো তো জানাবে।
- ওহ্, আচ্ছা।
- তামিম কোথায়?
- নিজের ঘরেই মনে হয়।
- ওহ্, কিছু শুনেছে কি?
- মনে হয় না।
- আপাদত কিছু বলিও না তাকে।আর ওরে বলিও এই কয়েকদিন যেন ওই বাড়িতে না যায়।
- আচ্ছা, ঠিক আছে।
২ দিন পর....
- কিরে, আজ তোর প্রাইভেট নাই? যাবিনা?
- নাহ্, আম্মু, যাবোনা আজ।ভালো লাগছে না।
- কেন? কি হয়েছে তোর।
- নাহ্, তেমন কিছু না।এমনিতেই।
-ওহ্, আচ্ছা।
-হুম।
- শুন,এদিকে আয় একটু।
- কি বল আম্মু।
- তোকে একটা কথা বলতাম।
- বল না আম্মু।
- তোর জেঠান তামিমের বিয়ের জন্য তোর কথা বলতেছেন। এখন তোর কি মতামত।
- কি বল আম্মু এগুলো
- হুম, এটাই।তোর জেঠান প্রথম আমাদের কাছে এমন করে কিছু চাইলেন।তাই তোর আব্বুর ও মত এতে।
- তো,তোমরা তো সব আগেই ঠিক করে নিলে। আমাকে ডেকে আর বলতেছো কেন?
- তুই কি বলতে চাচ্ছিস, আমরা ভুল করছি?
- নাহ্,ঠিক তা না।বাদ দাও,তোমরা যা বলবা আমি তাতেই রাজি।
- নাহ্, তুই মত না দিলে আমরা কিছুই করবো না।
- তুমি বা আব্বু কেউ তো জেঠানের কাছে অপরাধী হবা না,হতে চাইবে ও না।সেক্ষেত্রে আমার মতামত হ্যাঁ।
- ঠিক আছে।
সেদিন বিকেল বেলায়
- কিরে রহিম কিছু তো জানালে না আমাকে।
- ভাই আমি আপনার কাছেই যেতাম এখন। দেখি তো আপনিই চলে এলেন।
- এসে পড়লাম, কারণ তোর ভাবীকে তো জানাতে হবে তাই না। সে তো চিন্তায় আছে আবার এটা নিয়ে।
- ওহ্,
আচ্ছা। ঠিক আছে। আমি বলেছিলাম আমাদের বাসায় এটা।সবাই প্রথমে আপত্তি জানালেও এখন সবাই রাজি।
- যাক,ভালো হলো। আমি একটু স্বস্তি পেলাম। এখন তাহলে যাই।
- আচ্ছা ঠিক আছে।
.
.
এর মধ্যেই বিয়ে নিয়ে কথা হচ্ছে, সবাই বেশ আচমকিত,কেননা ভাইয়ের প্রস্তাব রাখার জন্য মেয়েকে বিয়ে দিতে রাজি হলো। তামিম ও এখন ওই বাড়িতে যায় না।কেননা এতদিন হাসির ছলে বললেও এখন বেশ লজ্জায় আছে সে।যে তানু এত ক্ষ্যাপা তার প্রতি সেও এখন রাজি।সবকিছু মিলিয়ে আনন্দের দিন। এর মাঝেই দিন,তারিখ ঠিক করে বিয়ে সম্পুর্ণ হলো।
..........
বিয়ের ২০ বছর কেটে গেলো
- যেখানে তো তুমি আমাকেই সহ্য করতে না আজ সেই তুমি আমার সাথে ২০ বছর কাটিয়ে দিলে,কিভাবে টুনি।
- শুনো,
আমার আব্বু আম্মুর সিদ্ধান্ত কে আমি সম্মান জানাই বলেই তোমার মত আবুল তামিম ভাইকে বিয়ে করি।হুহ
- হাহাহাহহাহা।তুমি ও না।পারবো না আমি তোমার সাথে ঝগড়া করতে।
- পারতে হবেনা তোমাকে।মেয়েকে স্কুল থেকে নিয়ে আসেন।যান এখন।
.
.
- তানু, আজকে জিমি কে স্কুল থেকে আনার পথেই আমার কেমন জানি খুব বুকে ব্যাথা করতেছিল।যেন আমি সেখানেই মারা যাব এমন অবস্থা।
- কেন? হঠাৎ কি হলো।
- জানিনা, সাথে কোমর টাও।বুঝতে পারছিনা।এখনো করতেছে ব্যাথা টা।
- আচ্ছা, রাত টা কাটাও। কাল এই আমরা হাসপাতাল যাবো।
- আচ্ছা ঠিক আছে।
.
.
রাত পোহাতে না পোহাতেই তামিমের ব্যাথা বাড়তেই থাকে।
-তুমি একটু অপেক্ষা কর,আমি হাসপাতালে ফোন দিয়েছি।গাড়ি এখনি আসবে মনে হয়।
- আমি মনে হয় আর বাচঁবোনা তানু।এইবার মনে হয় আমাকে যেতেই হবে।
- বাজে বকবানা।গাড়ি আসছে, গাড়িতে উঠো।
.
কাটিয়ে দিল হাসপাতালে দুইদিন।
- আমরা আপনার হাসবেন্ড এর বেশ কিছু পরিক্ষা করেছি।এবং এটা সিউর হলাম যে ওনার একটা কিডনি পুর্বেই নষ্ট হয়ে গিয়েছে এবং বাকিটা ও প্রায় ৬০% নষ্ট হওয়ার পথে।
- কি বলেন এটা কিভাবে সম্ভব হতে পারে।ওর তো কখনো কোনো সমস্যাই দেখা দেয় নি।স্বাভাবিক ভাবেই সে সব সময় স্ট্রং থাকতো।
- এই রোগীর উপসর্গ গুলো কখনো খুব ভয়ানক আকারে দেখা দেয় তো কখনো আবার দেয় না।আস্তে আস্তেই এটা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কে দূর্বল করে দেয়।
- কাদোঁ কাদোঁ কন্ঠে। এখন আমার কি হবে?
- আপনি কান্নাকাটি করে ভেংগে না পড়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওনাকে ভারতের মাদ্রাজে নিয়ে যেতে পারেন।যদি আপনার কাছে পর্যাপ্ত টাকা থাকে তবেই।
.
.
ভারতের চিকিৎসা নেওয়ার ঠিক ৫ মাস পরেই তামিম কে বাড়িতে আনা হয়।আর বলা হয় সে যেকোনো সময় সবাইকে ছেড়ে চলে যেতে পারে।তাকে যেন আনন্দের মধ্যে রাখা হয়।তাই সবাই তাকে একে একে দেখতে আসতেছে। হয়তো বেলা ফুরাবার আগেই সে সবাইকে রেখেই অন্তিমে পাড়ি দিবে।এদিকে তানু তাও খাওয়া দাওয়া সব ছেড়েই দিয়েছে প্রায়।
.
.
২ দিন পর
চারদিকের বাতাস যেন থমকে দাঁড়ালো। তামিম ভোর রাতেই নিশ্চুপ হয়ে যায়।কোন কথা নেই,কারো ডাকে তার সাড়া নেই।তার ছেলেমেয়েরা কান্নাকাটি জুড়ে দেয়। চারদিকে শুধু হাহাকার আর কান্নার আওয়াজ। তানুর কথা বন্ধ।আর তার সাথে ঝগড়া হবে না।করবে না কেউ সেই ছোট্ট বেলার কথা নিয়ে হাসি ঠাট্টা। অপেক্ষারা ঘুমিয়ে পড়ে
সেই সাথে ঘুমিয়ে পড়ে অপেক্ষা করা সেই মানুষ টা।
অপেক্ষারা আজ নিশ্চুপ
সেই সাথে নিশ্চুপ অপেক্ষা করা সেই মানুষ টা।
অপেক্ষারা আজ উন্মুক্ত
সেই সাথে উন্মুক্ত অপেক্ষা করা মানুষ টার হৃদয়
আজ সবাই ছুটি নিলো,ছুটি নিলো সেই অন্তিমের মানুষ টা
0 Comments
দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন